নরমাল ডেলিভারির পর জরায়ুর যত্ন(Care of uterus after normal delivery)

4.3/5 - (15 votes)

ভুমিকা : দীর্ঘক্ষণ  প্রসবযন্ত্রণায় নরমাল ডেলিভারির পর  গর্ভবতী মা একদম ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তাই দীর্ঘক্ষণ  প্রসবযন্ত্রণার পর প্রয়োজন পুষ্টিকর তরল  খাবার এবং প্রশান্ত ঘুম। এবং নরমাল ডেলিভারির পর জরায়ুর  যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নরমাল ডেলিভারি সময়ে আপনার শরীরের, বিশেষ করে জরায়ুর  উপর অনেক ধকল যায়। তাই নরমাল ডেলিভারির পর জরায়ুর যত্ন নেওয়া আবশ্যক ।

নরমাল ডেলিভারির পর জরায়ুর  যত্ন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ?

নরমাল ডেলিভারির পর জরায়ুর  যত্ন মাধ্যমে  জরায়ু দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে এবং নরমাল ডেলিভারি পর জরায়ুর যত্নে  অন্যান্য সমস্যা এড়ানো যায়।

নরমাল ডেলিভারি পর জরায়ুর যত্ন  : নরমাল ডেলিভারি পর প্রজনন অঙ্গগুলো বিশেষ করে জরায়ু

এবং যৌনিপথ স্বাভাবিক অবস্থায়  ফিরে আসতে বেশ খানিকটা সময়ের প্রয়োজন।  নরমাল ডেলিভারিতে অনেকের এপিসিওটমি লাগে বা টিয়ার থাকে, যা সার্বিক অবস্থা ফিরে আসতে কয়েক সপ্তাহ বা 12 সপ্তাহ মতো সময় লাগতে পারে।

নরমাল ডেলিভারির পর জরায়ু কাঁচা থাকে এবং জরায়ুর উপর দিয়ে অনেক ধকল যায় তাই নরমাল ডেলিভারি পর জরায়ুর  যত্ন অবশ্যই নিতে হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সংক্রমণের ঝুঁকি:

 নরমাল ডেলিভারির পর জরায়ু একটা ক্ষতের মতো থাকে। তাই এই সময়টাতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই নরমাল ডেলিভারি পর জরায়ুর যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার পর ব্যথা নিরাময় করার উপায় :

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার পর কয়েকদিন আপনার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা অনুভব হতে পারে। যেমন : স্তনে,তলপেটে, জরায়ুতে, মলধরে, যোনিপথের মধ্যবর্তী স্থানে। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ ছাড়াই ব্যথা সেরে যেতে পারে। তবে যদি ব্যথা না কমে তাহলে আপনার ও  আপনার বুকের দুধ পান কারি জন্য ব্যথার ঔষধ সেবন করতে হবে। যেমন:

•প্যারাসিটামন (নাপা রেপিড)

•নন স্টেরয়ডাল প্রদাহনাশক(আইবুপ্রোফেন)

•ওপিওয়েড জাতীয় ব্যাথানাশক(মরফিন,কোডেইন ও ট্রামাডল।

এই  ওষুধগুলো ব্যবহার করতে পারেন তবে প্যারাসিটামল সবচেয়ে ভালো এছাড়া অন্য ওষুধ সেবন না করাটাই উচিত।

নরমাল ডেলিভারির পর জরায়ুকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কিছু সহজ উপায় :

নরমাল  ডেলিভারির পর জরায়ু পূর্বের  আকারে ফিরে আসতে কিছু সময় লাগে। তবে সঠিক যত্নের মাধ্যমে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে  দ্রুত জরায়ুকে আগের আকারে ফিরে আনা সম্ভব ।

হাঁটাহাঁটি করা: নরমাল ডেলিভারির পর জরায়ুর যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর এর জন্য বাচ্চা প্রসব হওয়ার পর সুস্থ বোধ করলে যত দ্রুত সম্ভব অল্প অল্প করে হাঁটাচলা শুরু করা উচিত। হাঁটাহাঁটি করলে প্রসব পরবর্তী সময়ে ডিপ ভেইন থ্রাম্বোসিস নামক রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায় এবং জরায়ু সুস্থ থাকে। তবে হাঁটাহাঁটি শুরু করার আগে  স্বাস্থ্যসেবী বা ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

•রক্তস্রাব বন্ধ করা: নরমাল ডেলিভারির পর কিছুটা রক্তস্রাব হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি রক্তস্রাব বেশি হয় তাহলে তা জরায়ুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তাই বাচ্চা জন্মের পর প্রথম ১ ঘন্টা, ১৫ মিনিট পর পর মায়ের তলপেটে হাত দিয়ে জরায়ু হালকাভাবে  মেসেজ করে দিতে হবে। এবং আধা ঘন্টার মধ্যেই বাচ্চাকে মায়ের দুধ দিতে হবে।

রক্তক্ষরণ কেমন হচ্ছে তা মা নিজে যেমন খেয়াল রাখতে হবে তেমনি পরিবারের সদস্য অথবা স্বাস্থ্য সেবীকেও  খেয়াল রাখতে হবে ।

রক্তক্ষরণ বেশি হলে অবশ্যই হাসপাতালে যেতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

নরমাল ডেলিভারির পর জরায়ুর যত্ন নেওয়ার সহজ উপায়:

•বিশ্রাম  করুন: নরমাল ডেলিভারির পর মা একদম ক্লান্ত হয়ে যায়। এবং অনেক রক্তক্ষরণ হয় এতে মায়ের শরীর একদম দুর্বল হয়ে পড়ে তাই প্রয়োজন শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণ  বিশ্রাম দেওয়া ।

•পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা :

নরমাল ডেলিভারির পর জরায়ুর যত্নে  যোনির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিষ্কার পানি ও সাবান দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করুন। এবং নিয়মিত যত্ন নিন।

গরম পানি ব্যবহার করবেন না:

নরমাল ডেলিভারি পর গরম পানি ব্যবহার করলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে  তাই ভুলেও গরম পানি ব্যবহার করবেন না অনেকেই না জেনে না বুঝে গরম পানি ব্যবহার করে তাতে যোনিতে এবং জরায়ুতে  সংক্রমনের ঝুঁকি  বাড়ে। তাই ভুলেও নরমাল ডেলিভারি পর গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না 

• ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন: নরমাল ডেলিভারির পর জরায়ুর যত্ন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তাই ভুলেও

ডেলিভারির পর ভারী কিছু তোলা বা শারীরিক পরিশ্রম করবেন না ।

•প্রসব  পরবর্তী চেকআপ : নরমাল ডেলিভারির পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রথম চেকআপ করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় চেকআপ : প্রসব পরবর্তী তৃতীয় দিনে।

তৃতীয় চেক আপ : প্রসব পরবর্তী সপ্তম থেকে ১৪তম দিনে।

চতুর্থ চেকআপ : প্রসব পরবর্তী ষষ্ঠ সপ্তাহে।

এই চেকআপ গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই চেকআপ গুলোয় আপনার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় টীকা এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম সহ আরো নানান বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

• ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান: ডাক্তার যদি কোনো ওষুধ দেন তাহলে নির্ধারিত মাত্রায় নিয়ম মত ঔষধ সেবন করুন । এবং ডাক্তারের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ঔষধ সেবন করুন ভুলেও ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ঔষধ গ্রহণ করবেন না ।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন:

নরমাল ডেলিভারি পরশরীরে পানির ঘাটতি দূর করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। এবং বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস করে সেবন করতে পারেন এতে আপনার শরীরের নরমাল ডেলিভারি পর যে ধকল গেছে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।

• সুষম খাবার খান:

পুষ্টিকর খাবার খেয়ে শরীরকে সুস্থ রাখুন । নিয়মিত ফলমূল খান বিশেষ করে আপেল, আঙ্গুর, মালটা, আমরা, এই ফলগুলো খেতে পারেন তাতে নরমাল ডেলিভারি পর যে ক্ষত সৃষ্টি হয় তা দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করবে।

• নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন: নরমাল ডেলিভারির পর জরায়ুর যত্নে  নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

• যদি রক্তস্রাব বেশি হয়।

• যদি জ্বর আসে।

• যদি পেটে ব্যথা হয

• যদি যোনিতে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব হয়।

•  কাশি হলে,  ব্যথা হলে, অথবা শ্বাসকষ্ট হলে

• বমি হওয়া মাথা ব্যাথা করা এবং চোখের ঝাপসা দেখলে।

 মনে রাখবেন:

ডেলিভারির পর জরায়ুর যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপরের পরামর্শগুলি মেনে চললে আপনি সুস্থভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন। ইনশাল্লাহ।

Leave a Comment